অনুপম বলছি
বিংশ
শতাব্দীর প্রথমার্ধে হান ভাঁ মীগরেঁ নামক একজন চিত্রকর ছিলেন, তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর অমর ডাচ শিল্পী য়োহানেস ভারমিয়েরের হয়ে কিছু
ক্যানভাস এঁকেছিলেন বিংশ শতাব্দীতে বসে, এবং, শিল্প সংগ্রাহক সেজে সেগুলোকেই আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করে ধনকুবের হয়ে বসেছিলেন,
যতক্ষণ না নিজে স্বীকার করেছিলেন কেউ বুঝতেই পারেনি সেগুলো অরিজিনাল
ভারমিয়ের নয়, এমন কি পৃথিবীর ভারমিয়ের-চর্চা এই জাল
ছবিগুলোকে ভিত্তি করে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিল, বলার পরেও কেউ
বিশ্বাস করেনি সেগুলো জাল, পুলিশ প্রহরায় বসে মীগরেঁকে এঁকে
প্রমাণ করতে হয়েছিল তিনি ভারমিয়েরের হয়ে ছবি আঁকতে পারেন, এবং,
তিনি ভারমিয়ের নন। “আমি আধঘন্টায় একটা ‘অজ্জিনাল’ ভারমিয়ার এঁকে ফেলব”- এটা মীগরেঁ বলেননি। ও কথা বললে যে ব্লাশফেমি হবে, তিনি
জানতেন। মীগরেঁ তাঁর চেয়ে কয়েক শতাব্দী আগে এসে পড়া মহান শিল্পী ভারমিয়ারের হয়ে
সেই ছবিগুলো এঁকেছিলেন যেগুলোর প্রভাব দর্শকচিত্তে ভারমিয়েরের আঁকা ছবির সমান হতে
পারে, কিন্তু কস্মিনকালেও ভারমিয়ের সেগুলো আঁকতেন না।
সম-অনুভূতির মজা এটাই। এই কারণেই হোমিওপ্যাথি নিয়ে মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞানে অস্বস্তির
সীমা নেই। তার চেয়ে সরাসরি টুকলি হলে মিটে যায়। এই তো আমার লেখার ঘরের দেওয়ালে এই
মুহূর্তে ঝুলছে রেমব্রাঁ-র আঁকা ‘আ বেদিং ওম্যান’! কিন্তু সেটা সত্যিই কি রেমব্রাঁর আঁকা? না। ওটা
প্রিন্ট। সাইবার প্রযুক্তিতে ওটা উৎপাদন করতে ত্রিশ থেকে চল্লিশ সেকেন্ড লাগে। খরচ
হয় কুড়ি থেকে ত্রিশ টাকা। অনুকরণ আর অনুসরণের তফাৎ এটাই। আদমের পাঁজর থেকে ঈভের
সৃষ্টি, আর ফ্রাংকেনস্টাইনের শবদেহে প্রাণসঞ্চার প্রক্রিয়া
ঘুলিয়ে ফেললে চলবে না, প্রিয় পাঠক। (অনুপম মুখোপাধ্যায়।
পরিচালক। বাক্)
বিশ্বরূপ দে সরকারের কবিতা
যেটুকু
এটুকুই যথেষ্ট নয় যখন আত্রেয়ীর প্রোটিন
মানে জেলেপাড়ার ভেতরে বালি ও রাইখরের যোগফল।
না থাকার কাছে অথবা ব্রীজের ওপর শচীনের মা
এখানে পথ, ছায়া এবং কীর্তন মাটির সঙ্গে
মিশে যায়। তুমি স্মৃতি থেকে এমন গোধূলি বের করো
যে নানা বয়সের কুয়াশায় ভিজে ওঠে চাঁদের আওয়াজ।
ঊষার ধোঁয়া ওড়ে সন্ধ্যাকর নন্দীর মাঠে।
এখানে নিঃশ্বাস এত মুদ্রিত ও ধর্মপ্রাণ বাতাসেরা জানে।
তুচ্ছ ডালপালা নিয়ে তবু শিহরণ ঝুঁকে আছে জলে ও জোৎস্নায়।
এর আগেও অনেক অস্ফূট নিশি ছেড়ে গ্যাছে
চরাচর। উন্মাদ হয়েছে পাখি ও কামিনীফুল
অথচ সেইসব ইচ্ছের ফুসফুস আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
শহরের ধুলো আর রবিবার এইসব ঘটনার প্রমাণ।
রোগা, স্পর্শবাজ, অভিমান অধ্যুষিত একটা নদী
মনে হয় পূর্ণিমার আলোয় তাকে শ্মশান পার করে দিয়ে আসি।
এটুকুই যথেষ্ট নয় যখন আত্রেয়ীর প্রোটিন
মানে জেলেপাড়ার ভেতরে বালি ও রাইখরের যোগফল।
না থাকার কাছে অথবা ব্রীজের ওপর শচীনের মা
এখানে পথ, ছায়া এবং কীর্তন মাটির সঙ্গে
মিশে যায়। তুমি স্মৃতি থেকে এমন গোধূলি বের করো
যে নানা বয়সের কুয়াশায় ভিজে ওঠে চাঁদের আওয়াজ।
ঊষার ধোঁয়া ওড়ে সন্ধ্যাকর নন্দীর মাঠে।
এখানে নিঃশ্বাস এত মুদ্রিত ও ধর্মপ্রাণ বাতাসেরা জানে।
তুচ্ছ ডালপালা নিয়ে তবু শিহরণ ঝুঁকে আছে জলে ও জোৎস্নায়।
এর আগেও অনেক অস্ফূট নিশি ছেড়ে গ্যাছে
চরাচর। উন্মাদ হয়েছে পাখি ও কামিনীফুল
অথচ সেইসব ইচ্ছের ফুসফুস আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
শহরের ধুলো আর রবিবার এইসব ঘটনার প্রমাণ।
রোগা, স্পর্শবাজ, অভিমান অধ্যুষিত একটা নদী
মনে হয় পূর্ণিমার আলোয় তাকে শ্মশান পার করে দিয়ে আসি।
ইন্দ্রনীল ঘোষের কবিতা
উপকথার ধারে
যে মানুষে কান্না ছিল না
লালা থেকে অপরাহ্ণ ঝরত —
সারা শরীর ঘর ফেলতে ফেলতে
নিজেকেই বুনে তুলত কুরুশ কাঁটায়...
তার অঘ্রাণে ভুখ ও হরতাল
চামড়ার গীতিকা জুড়ে, দূরে
মানুষের খিদেতে
আলো ওঠা রেডিও স্টেশন...
অনুরোধ তারও ছিল
চাষের শিক্ষাও
যে মানুষে কান্না ছিল না
অমিতাভ মৈত্রর কবিতা
পাতারা ঝরে
যেতে রাজি হচ্ছে না। গড়িমসি করছে
কিন্তু গাছ আর
ওদের সহ্য করতে রাজি নয়
শিকড় থেকে
নিজেকে বদলে নিতে শুরু করেছে নিঃশব্দে
যাতে জায়গা
ছাড়তে বাধ্য হয় পাতারা
মণিদীপা
সেনের কবিতা
১
বাসি বিছানা বড় কাঁচা জায়গা
কে কার কতটা অনুঘটক
এড়ানো যায় না
২
কথারা কবিতা হয়ে গেলে
কবি জোকার হয়ে যায়
৩
বুক ফুঁড়ে জল উঠলে তুমি বালতি ভরছ
নির্বিকার চোখ মুছিয়ে বাগান করছ
হাতের পাতায় ফুল রেখে বলছ, ‘দ্যাখো
সন্তান এমন হয়’
ফলাফলই সব?
হাসান
রোবায়েতের কবিতা
তুলারাশি
তুমি কি টিলার ছোট মেয়ে—তুলারাশি—
শাসনে রেখেছো হাওয়া আর উপকূল!
অ্যানাস্থেশিয়া ভেসে যায় বুদবুদে
প্রবীণ বাতাসে কেঁপে ওঠে ধুন্দুল—
আমরা শুধুই এপিটাফ পড়ে পড়ে
পাশার ভেতরে খুঁজে গেছি নদীতীর—
পোড়া ঘাসগুলো চিনিয়ে দিচ্ছে দূর
এইসব কত সাব-অল্টার্ন ভীড়!
তুমিও বেদের মেয়ে ছিলে এককালে
জোছনা অথবা অন্য যেকোনো নামে!
হাঙরের ভয়ে নিভে গেছে ভরা চাঁদ
সমুদ্র-শোরে বিপুল মধ্যযামে
নৌকা যায়, আসে
যেখানে তোমার নদী জলমিতা, আর
মাধুডাঙালীন
ঝরে গেছে কণ্ঠিফুল বিষাদে হাওয়ার
পরাঙ্মুখ দিন
তুমি কি নামবে তীরে বিস্মৃতি যেমন
কাঁপছে বাতাসে
মনে পড়ে, ডুবে গেছে শেফালির বন
নৌকা যায়, আসে—
তোমাকে ভোলার পরে ফাঁপা এইভাবে,
ধু ধু লেনা-দেনা
বাতাস ধূসর হলে দূরে চলে যাবে
কিছু ফিরবে না—
সাপিনী
এভাবে যদি বিঁধতে পারো ফণা
মাটিতে রাখা কুশলী পরিচয়
পিরালি ভাঙা ঘরের পাশে আজো
মহুয়া ফোটে, লেহাজে অভিনয়—
যদি না আসি শরীরে, ভরা মূলে!
পানিতে নেমে সাপিনী ভাবে বিষে
কিভাবে এত গড়িয়ে দেবে ছাঁচ
লাঙলে কার নুনের দলা লেগে
সপাটে খোলে রাতের এঁটো ভাঁজ—
যদি না আসি শরীরে, ভরা মূলে!
ক্ষুধার্ত সে এখানে সারাবেলা
অভাবে কাদা সহসা ফেটে চিড়
হুড়কো লাগা ছিল কি আধো ভাবে
দেরাজ যেন খুলতে পারে ধীর—
যদি না আসি শরীরে, ভরা মূলে!
চোরেরও নাকি ধর্ম আছে শুনি
হাতের বালা সিঁথানে রেখে যায়
জানালা-পাশে পেয়ারা কাঁচা ফুলে
ঘ্রাণে কী সব ডাকছে অপেরায়—
যদি না আসি শরীরে, ভরা মূলে!
ধীমান
চক্রবর্তীর কবিতা
ব্যক্তিগত ২৯
উড়লেই কেউ কেউ স্বপ্ন আর পুড়ে যাওয়া
শহর পায়।
গাছেরা কখন যেন কাঠের মানুষ খুঁজে
হাঁটতে থাকে। আগুন হাত নাড়লে ফুলকি।
উড়লেই কেউ কেউ স্বপ্ন আর পুড়ে যাওয়া
শহর পায়।
গাছেরা কখন যেন কাঠের মানুষ খুঁজে
হাঁটতে থাকে। আগুন হাত নাড়লে ফুলকি।
নিঃশ্বাসে এক জখমি পৃথিবী। পর্দা সরালেই
আমার মা।
একটা হাত। বৃষ্টি জানাতে গিয়ে
তুমি নিজেই ঝরে পড়লে। গত সত্তর বছর
মানুষের ভালো করার কথা ভেবেছো।
সামনে ইসকুল, পিছনে ইসকুল, সারাদিন
কাটাকুটি খেলে।
আর খেলতে খেলতেই তো টপ্পা। মধ্যরাতে
খুলে রাখে গলার স্বর, ভাঙা অন্তর্বাস।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
বিফোর ক্রাইস্ট
সন্ধের বয়ামে আলো জ্বলে উঠল, রাস্তা বরাবর থাকল
পরিক্রমা করা শহর, ধুলো নেভানো জল, শীতের পূর্ণিমা
মেষপালকের উঠোনে পশম জমা হচ্ছে, তারা সহোদর -
অনায়াসে পরিণত হতে হতে
আমাদের নাগরিক আলাপ সাদা পায়রা গুনছিল।
মালি ফুল। যতটা এক নিশ্বাসে।
অলস একটা আড়ভাঙা মাঠ, প্রতিটা আয়ত ধরে ঘুম
শিশির তলার যাতায়াত, বাহনের নাম ভোর, আলোঘর
এভাবে চৌহদ্দি পেরিয়ে গেল। থামা বলতে ছন্দ অলংঙ্কার
বেলাগাম, বেগতিক। দুপুর পুড়ে গেলে পায়ে পায়ে পরিধি
আর একটা রাত্রির গণ্ডি থামিয়ে দিচ্ছে যাযাবর নিজেকে
এখন কোনো প্রতিমা গড়ার কাজ নেই। শীতকাল।
আমার মধ্যে তোমার জন্ম কেক।
মোমবাতির আসর। আগুন নিভে যাচ্ছে। হাততালি দাও।
সন্ধের বয়ামে আলো জ্বলে উঠল, রাস্তা বরাবর থাকল
পরিক্রমা করা শহর, ধুলো নেভানো জল, শীতের পূর্ণিমা
মেষপালকের উঠোনে পশম জমা হচ্ছে, তারা সহোদর -
অনায়াসে পরিণত হতে হতে
আমাদের নাগরিক আলাপ সাদা পায়রা গুনছিল।
মালি ফুল। যতটা এক নিশ্বাসে।
অলস একটা আড়ভাঙা মাঠ, প্রতিটা আয়ত ধরে ঘুম
শিশির তলার যাতায়াত, বাহনের নাম ভোর, আলোঘর
এভাবে চৌহদ্দি পেরিয়ে গেল। থামা বলতে ছন্দ অলংঙ্কার
বেলাগাম, বেগতিক। দুপুর পুড়ে গেলে পায়ে পায়ে পরিধি
আর একটা রাত্রির গণ্ডি থামিয়ে দিচ্ছে যাযাবর নিজেকে
এখন কোনো প্রতিমা গড়ার কাজ নেই। শীতকাল।
আমার মধ্যে তোমার জন্ম কেক।
মোমবাতির আসর। আগুন নিভে যাচ্ছে। হাততালি দাও।
অরিত্র সান্যালের কবিতা
তোমার বিপুল আনন্দাশ্রু হোক
দুই
কোনও পাঠক না
থাকার মতো রিক্ত
চরাচর কিন্তু
অপূর্ব এক দৃশ্য।
চারিদিকে এত আলো
এত আলো যে মনে
হয় পৃথিবীর সব
বই খুলে গেছে
অথবা
মৃত্যু হয়েছে তারাটির
আর
তার শবের উৎসব
চুঁইয়ে পড়ছে মহা আকাশ
জুড়ে
জীবন আমার সিক্ত
ও উজ্জ্বল কলমী ফুলের
কাছে হেলান দেওয়া
আর পাখিদের রাজপথে
এখন এক খন্ড সফেদ
অশরীরী ভেসে বেড়াচ্ছে
সব আলোই অনন্তে
ধাক্কা খায় একবার।
যে অক্ষরগুলি তুমি
আমার বলে চেনো
তার প্রভা আমাদের
কাহিনির ভিতর অসীম
চিৎ হয়ে শুয়ে
থাকে
একা মধ্যরাতে এরপর নিরাকারের চোখ খুললো আজ
চরাচরে
শানু
চৌধুরীর কবিতা
১.
প্রতিটি প্রায়ান্ধকার বলয়ের মাঝে ফিরে আসি। যখন মাছের ডিমের মতো গন্ধ নিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে স্রোতের মাথা ও বাটালির ধার। স্ফীতকায়! তোমার গাঢ় হয়ে আসা জিভে নির্বিষ উপঢৌকন দোলা খায়। জ্বলে যায় বাক্যের ধর্মে রুপোর গয়নার ভার। একটা বাস চলে গেল। তীব্র আকাঙ্খায়। আর আমাদের বিসর্জন এখনও কাতর। কি বলবে তুমি? শিশুদের চিহ্ন এখন আর
কোথাও পড়ে নেই। ছিন্নমুন্ডু থেকে গড়িয়ে পড়ছে আলতা রঙের
গ্রাম। চটি পড়ে হাঁটা যায়? একটা হিঁচড়ে নেওয়া ফিতে সেফটিপিন দিয়ে
বাঁধতে গিয়ে আমার ডান চোয়ালের মাঝে বিকারগ্রস্ত মাথা মণিকাঞ্চন খুলতে চায়। এই পাথর আর গুটখার দাগে, তখন দাঁড়িয়ে থাকা কোনো মেয়ের টোলপড়া হাসিটিতে পৃথিবীর
আঙুল বেঁকে যায়।
২.
আলোর নীচে ঊষা মাখছে ভোরের পাখিটি। আর রুটির নিচে ডুবে যাচ্ছে কারও
সুমিষ্ট কন্ঠস্বর। এই হাতের চুড়িটি এখনও তো স্বর্গ বলেনি। হারিকেনের কাচে তাই কি ব্যর্থতা? ঘাসজমি থেকে আমাকে হেঁচড়ে নিয়ে যাও
তুমি গৃহপালিত ভাষার দিকে,পান্নার মতো যার রঙ। এখন ঘুমিয়ে আছে সেখানে মা। যার আলোকবাতির মাঝে আমি ছাড়িয়ে নিচ্ছি বাজ পড়া হলুদ গাছটির ইন্তেকাল।
৩.
এই ডালিমফুলে কোনো এক জলপ্রণালীর কিনার
ছুঁড়ে ফেলছে ভাঙা ট্রেনের প্রবাল বাতাস।
ছুঁড়ে ফেলছে ভাঙা ট্রেনের প্রবাল বাতাস।
এই মুক্ত এপিথেট অন্তরা ভেবে ছুটে গেছে
কখনও কি বাসভবনের একক মুদ্রায়?
এখনও প্রভাত হলে কুয়াশা মাড়িয়ে যাই
ভোর ভোর কুসুমের বায়ুমাত্র খিলানে যখন
কেউ অস্ত্র চাঁছতে চাঁছতে হয়ে ওঠে মানুষ
কথা বলো ডালিমফুল! কোনও শালপাতার বাগানে
উপর্যুপরি যেখানে রমণীর বিক্রয়মূল্যের মুকুর
কথা বলো ডালিমফুল! যেখানে কিশলয়
মরুভ্রম ভেবে ঢেলেছে চুলা জ্বালানো
কখনও কি বাসভবনের একক মুদ্রায়?
এখনও প্রভাত হলে কুয়াশা মাড়িয়ে যাই
ভোর ভোর কুসুমের বায়ুমাত্র খিলানে যখন
কেউ অস্ত্র চাঁছতে চাঁছতে হয়ে ওঠে মানুষ
কথা বলো ডালিমফুল! কোনও শালপাতার বাগানে
উপর্যুপরি যেখানে রমণীর বিক্রয়মূল্যের মুকুর
কথা বলো ডালিমফুল! যেখানে কিশলয়
মরুভ্রম ভেবে ঢেলেছে চুলা জ্বালানো
পড়শীর প্রথাগত অনূঢ়া
তানজিন তামান্নার
কবিতা
ঘুমের পাশে
সূর্যতে ফুঁ দিয়ে রাতের জন্মদিনে নিমন্ত্রণ… ক’ফোঁটা জলে ভাঙবে নিশ্ছিদ্র ঘুম?
ভাতের বদনামে ফোঁপাচ্ছে অভুক্ত ঢেউ
নদীর নাভিতে নিঃশ্বাসের মৎস্যস্নান…….
মাঠতলীতে বুক পেতে দাঁড়ালো ভাঙনের তোলপাড়
চালকুমড়ার গর্ভপাতে বিড়িখোড় জোনাকী
রসের থেকে কি আছে এমন নিশিডাক!
কুরিয়ার সিরিজের কবিতা
ডাকনাম
প্রেরক প্রাপক
কদমরেণুর ঘাম
স্মৃতির চূরা
… হাঁটছে যমজ বৃন্তের ডাকনাম…. শীত শেষে ভাঙবে জুতার নির্ঘুম প্রলাপ। আর সূর্যাস্তের আগে চুল আঁচড়ায় গাছেরা। কদমরেণু’র ঘাম সেঁচে আয়নাবিলে চুঁইয়ে পড়ে ঘ্রাণ। এমনই এক নির্যাস শুষে অনীতা দিদা উঠে যাবেন স্মৃতির চূড়ায়…
স্মৃতি খুঁড়ে খুঁড়ে উড়ে যায় ছোঁ-বিদ্যায় পারদর্শীরা। খুব বেশি হলে ঠোঁট বুলাতে পারে মেঘ ঘুমের কপালে। আর কপাল বেয়ে টুপটাপ টুপটাপ পড়ে জ্বরের ক্লান্তি…
জহির হাসানের কবিতা
আমার সোমবার
রাতের ঘুম
আমি যতবারই স্বপ্নের ভিতর মরছি
কোনো বারই আমারে
কবর দেওয়া হয় নাই!
আমার লাশগুলি একটা অন্ধকার ঘরে
পরপর সাজানো থাকে তো!
গতকাল যখন দেখলাম একটা বাঘ
আমার ঘাড় ধরি টানতে টানতে
একটা পাহাড়ের নিচে আনছে
আমারে খাবে!
আমার ভয় আর ছটফটানি
প্রাণের মৃত্যুর কাছে কাকুতি
আমি দেখলাম স্বপ্নের ভিতর!
প্রতি সোমবার সকালবেলা
আমার ঘুমেরতে দেরিতে উঠার কারণ
স্বপ্নের ভিতর আমার লাশগুলি
গোলাপবনের মধ্যে সাজায়ে রাখি
যাতে গন্ধ না বার হয়!
আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি
কেউ ভালবাসি কয়ে
যদি স্পর্শ করি বসে ফের!
আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই
আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই
আমারে যদি ফের বহুকাল জঙলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই
আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই
আমারে যদি ফের বহুকাল জঙলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
অসহ্য আকাশের
ভাওতা বিস্তার
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!
আমি মেয়েদেরতে
দূরে থাকি!
পাহাড়ে আসি গান
গাওয়া
যখন পাহাড়ে গেছি
দেখি আমি গান গাচ্ছি
দেখি আমি গান গাচ্ছি
কান পাতি শুনি
মোর গাওয়া গানে
অন্য কেউ যেন ভাগ বসায়েছে
মোর গাওয়া গানে
অন্য কেউ যেন ভাগ বসায়েছে
দেখি যে পাহাড়ও কিছুটা গাইছে
আমার ভিতরে আসি
গানের ভিতরে
আমার ভিতরে আসি
গানের ভিতরে
ফলে এইভাবে
পাহাড়েতে আসি
পাহাড়েতে আসি
একা একা গান গাওয়া
সত্যি অসম্ভব!
সত্যি অসম্ভব!